Skip to main content

ইন্দোরের সারাফা বাজার: মাঝ রাতে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া

আপনি ইন্দোরে গিয়েছেন আর সারাফা বাজারে খেতে গেলেন না, এটা অনেকটা ভিনরাজ্য থেকে কলকাতায় এসে রসগোল্লা না খাওয়ার মতো। গত ডিসেম্বরে আমার একাকী মধ্যপ্রদেশ ভ্রমণের ‘ মাস্ট ডু ' লিস্টে ছিল সারাফা বাজারে খাওয়া। 'সারাফা' একটি আরবি শব্দ যার মানে হলো ব্যাঙ্ক বা লগ্নী ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত ।
সুতরাং তাহলে হয়তো ভাবছেন এ ধরণের বাজারে সোনা-দানা বা গয়না থাকতে পারে কিন্তু এর সাথে খাবারের কি যোগাযোগ ? আসলে ইন্দোরের সারাফা হল দিনের বেলায় সোনা, রুপা এবং গয়নার বাজার যেটা রাতের বেলায় বিভিন্ন রকমের মুখরোচক খাবারের বাজারে বদলে যায়। সোজা কথায় আপনি ফুড ফেস্টিভ বা স্ট্রিট ফুড বাজার ও ভাবতে পারেন।
কবে থেকে সারাফা বাজারে দিনে গয়না আর রাতে খাবার বিক্রি শুরু হলো ঠিক জানা যায় না। তবে প্রায় ৫০০ বছরের এই পুরোনো শহর একসময় ডেক্কান থেকে দিল্লীর পথে 'ট্রেড রুট ' ছিল। ব্যাপারীদের এই বাজারে তাদের জিনিসপত্র বিক্রিবাট্টা করতে কিছুদিন সময় লেগেই যেত আর তাছাড়া আবহাওয়া এবং পথের ক্লান্তি দূর করতেও অনেকে এই জায়গায় আশ্রয় নিতেন কিছুদিন। যেহেতু একসাথে অনেক সোনা - দানা এবং গয়নার দোকান আছে এক জায়গায় তাই রাতে বেশ কড়া পাহারার প্রয়োজন হতো। আর যারা পাহারায় থাকতেন তারা নিজেদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থার জন্য রাতের বেলায় বন্ধ সোনার দোকানের সামনের জায়গায় রান্না শুরু করলেন এবং পরে আস্তে আস্তে খাবার বিক্রিও করাও শুরু করলেন। বিভিন্ন দূর দেশের ব্যাপারীরা আসতেন বলে বিভিন্ন দেশের অনেক রকমের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যেতে শুরু করলো রাতের সারাফায়। আর ধীরে ধীরে সেই সব খাবারের স্বাদ আর গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল দুরদূরান্তরে যা এখনো অদ্বিতীয় পুরো ভারতবর্ষে। সারাফায় খেতে হলে আপনাকে রাতের খাবার অবশই অনেকটা দেরি করে খেতে হবে কেননা সারাফা ফুড বাজার রাত ৯ টা থেকে রাত ২ পর্যন্ত খোলা থাকে আর খাবারের সবচেয়ে ভালো সময় হলো রাত সাড়ে দশটা থেকে একটা পর্যন্ত। রোজ রাতে প্রায় তিন হাজারের মতো স্থানীয় বাসিন্দা এবং ট্রাভেলের - ট্যুরিস্টরা আসেন সারাফাতে খেতে। আর হ্যাঁ, সারাফা সপ্তাহের সাতদিন ই খোলা থাকে, ইন্দোর ভ্রমণের তালিকা থেকে বাদ যাবার ভয় নেই।
প্রায় ৫০ রকমের শুধু মাত্র নিরামিষ খাবার পাবেন সারাফাতে তাই একদিন বা দুইদিনে সব খাওয়া সম্ভব নয়। আমি তিন দিন ইন্দোরে ছিলাম অরে রোজ গিয়েও সব খেতে পারি নি। তাই মোটামুটি একটা ‘ অবশই খাবেন ’ র লিস্ট বলছি: হিন্দি বা ইংলিশে বুঝতে ও বলতে সুবিধে হতে পাশে ইংলিশে নাম লিখে দিচ্ছি। আমি মিষ্টি খেতে সবচেয়ে ভালোবাসি তাই মিষ্টির নাম দিয়ে শুরু করছি। আর বাঙালি হয়ে মিষ্টি পছন্দ করে না, সংখ্যাটা কিন্তু একটু কম।
১. রাবড়ি ও মালপোয়া - আলাদা করেও খেতে পারেন অথবা একসাথেও খেতে পারেন। মালপোয়ার স্বাদ অন্য রকম।


২. গাজরের হালুয়া - হয়তো অনেকবার খেয়েছেন, কিন্তু এটা অন্য রকম খেতে একেবারে।
৩. মুগের হালুয়া - মুগ ডালের সাথে দুধ, চিনি, ক্ষীর মিশিয়ে তৈরি। এটা আমি এই লোকডাউন ফেজ - II তে বানিয়েছিলাম। 


৪. জালেবা - জিলিপির বড় সংস্করণ তাই তার নাম জালেবা। বলতে হবে কতটা ওজনের জালেবা আপনি খাবেন সেই মতো বানিয়ে দেবে সঙ্গে সঙ্গে। আপনি যত বড় চাইবেন পেয়ে যাবেন। একটা কড়াইতে শুধু এক খানা জালেবাও বানিয়ে দেবে।


৫. গোলাপজাম - গরম গরম, নরম তুলতুলে গোলাপজাম।


৬. মশালা দুধ - ঘন গরম দুধের মধ্যে পেস্তা, কাজু, আখরোট আর মিষ্টি দিয়ে বানানো।
৭. শ্রীখণ্ড - এটা যেন আপনার লাস্ট খাবার হয়। খুব ঘন দুধ প্রায় ক্ষীর দিয়ে তৈরি।অবশ্য দোকানিও বলে দেবে যে ' এর পর আর কিছু খাবেন না।
৮. যোশীর দই বড়া (Joshi ka Dahi Vada) - অতি অবশই খেতে হবে, ১৯৭৭ সালের এক বিখ্যাত দোকান যেখানে খুব তাড়াতাড়ি সব বিক্রি হয়ে যায়। এই দোকানের দই বড়া শাল পাতার বাটিতে দিয়ে তা ওপর থেকে নিচের দিকে নামানোর কায়দা দেখার মতো।


৯. গরারু - এক ধরণের ওল কে রোস্ট করে ছাঁকা তেলে ভেজে তাতে এক জিভে জল আনার মতো মসলা মিশিয়ে দেয়। পাশে কিছু দোকানে গরারু-র মসলা কিনতে পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলে কিনে নিন , বাড়িতে স্নাক্স র সাথে খাওয়া যাবে।


১০. Bhutte ka Kees বা ভুট্টার চাট - ভুট্টার দানা কে গুঁড়ো করে তাতে নানা রকমের মসলা মিশিয়ে এক এটি সুস্বাদু খাবার।
১১. ছোলে টিকিয়া - আলুর টিকিয়া সাথে রোয়াস্টাড ছোলা আর অসাধারণ খেতে কিছু মসলা মিশিয়ে বানায়। অবশ্যই খেতে হবে।
১২. খোপড়া প্যাটিস - এটাও যোশীর দই বড়া-য় পাবেন, খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় তাই গিয়েই পারলে আগে খেয়ে নিন।
১৩. নারকেল ক্রাশ - ডাবের মালাই বা যাকে আমরা শাঁস বলি সেগুলো কাঁচিয়ে নুন, মসলা দিয়ে মিশিয়ে এক লাজবাবঃ ডিস্।


১৪. মশালা দোসা - নামটা শুনে চেনা মনে হতে পারে কিন্তু পুরো কাস্টোমাইজ মাসালা দোসা। দোসার পুরের তরকারি আর মসলা এতটাই সুস্বাদু যে আপনি না খেলে বুঝবেন না।


১৫. বিজয় চ্যাট হাউসের কচুরি বা কোচরি - দোকানের সামনে প্রচন্ড ভিড়, তা দেখে চলে যাবেন না। ভিড় ঠেলে এগিয়ে জাস্ট কিনুন এবং খান। অতি পুরোনো আর নাম করা দোকান।
১৬. গজক - তিলের তৈরি নানা রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার। পেটে জায়গা না থাকলে কিনে নিন, পরে খাবার জন্য।
১৭. পনীর কাবাব - যারা পনীর পছন্দ করেন না , তাদেরও ভালো লাগবে। এত রকমের যে পনীরের কাবাব হতে পারে জানা ছিল না। অবশ্যই খেতে খুব ভালো লাগবে।


১৮. দশ রকমের ফুচকা - শুধু মাত্র ফুচকা প্রেমীদের জন্য নয়।
১৯. রাতালু - পার্পল য়াম বা বেগুনি রঙের রাঙা আলু লেবু, ধনে, লঙ্কা গুঁড়ো মাখিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে চাট মসলা মিশিয়ে এক জিভে জল আনা খাবার।
এছাড়া নানা রকমের চাট, কুলফি, ফলের শটস, লস্যি, ইন্দরি শিকান্জি, মশালা চা, কৎবেল-র চাটনি, লাল রঙের কাঁচা তেঁতুল আর প্রায় ১৫ রকমের মিঠা পান আছে।

কি ভাবে যাবেন: মধ্য ইন্দোরের রাজ্বরা ঠিক পাশে সারাফা বাজার অবস্থিতি। বড় এবং ছোট সারাফা বাজার নামে দুরো বাজার আছে। রেল স্টেশন থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে। ইন্দোরে উবের, ওলা চলে তাই রাতের বেলায় সারাফায় খেয়ে ফিরতে কোনো অসুবিধে হবে না। আমি ইন্দোরের বিজয়নগরে ছিলাম যেখান থেকে সারাফা ৭ কিমি দূরে আর রাত ১২.৩০ একাই সারাফা থেকে ফিরেছি, কোনো অসুবিধে হয় নি।
গাড়ি রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই তাই গাড়ি নিয়ে গেলে রাজ্বরা তেই রাখতে হবে।
Note: বেশি খেয়ে ফেললে হাগু-হিসু পেতেই পারে, ১০ দশ টাকার বিনিময়ে খুব পরিষ্কার সারাফা বাজারের স্মার্ট টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন।

Comments

  1. "From a playing standpoint, there is no a|there is not any} information to say that slot machines are a type of harm reduction," Dr. 점보카지노 Timothy Fong, co-director of UCLA's Gambling Studies program, informed NPR. But there are few – if any – research that suggest that service members are higher off half in} slots on base than playing elsewhere. While deployed abroad, service members are sometimes isolated, separated from friends and family and obtain increased pay. For these seeking recreation on base, slot machines are sometimes just a quick walk away.

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

কদম ফুল - Kadam phool- common burflower

বর্ষাকালের সিগনেচার বলা হয় কদম ফুলকে , আরেক নাম নীপ , " এসো নীপ বনে ... " কবিতা তো জানাই আছে যাতে বর্ষা মানেই নীপ ( কদম্ব ও বলে অনেক রাজ্যে ) ।   খুব পরিচিত এই ফুল , নিটোল গোলাকার , প্রথমে সবুজ , পরে লাল থেকে টকটকে কমলা রঙের সাথে অসংখ্য লম্বা সাদা ফ্রিলস পুরো ফুল জুড়ে ।   হাতে নিলে বোঝা যায় বেশ একটু ভারী , মানে কাউকে ঢিল ছুড়ে মারার মতো আর ওই সাদা ফ্রিলস গুলো এমনিতে নরম কিন্তু ছুড়লে হুঁহুঁ , লাগবে বেশ। খুব মিষ্টি একটা গন্ধ আছে , গাছের পাস দিয়ে গেলেই টের পাওয়া যায় ফুল ফুটেছে   ( কদম তলায় কে ?) । প্রচুর ফ্র্যাংগনান্স বা আতর তৈরি হয় এই গন্ধের। আমাদের দেশের লিপিগুলোতে কদম ফুলের ও গাছের নাম আছে আর আমাদের পৌরাণিক কথকথায় কদম ফুলের বড়ো মুখ্য একটা জায়গা আছে।   ভারতের উত্তর দিকে , ভগবৎ পুরান থেকে শুরু রাধা ও কৃষ্ণের দুজনের জীবনেই   কদম ফুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।   বৃন্দাবন - মথুরায় , গোবর্দ্ধন পাহাড়ের দিকে   প্রচুর কদম গাছ , এই সময় মানে বর্ষাকালে একবার রাধে - রাধে

My days in the Gunj

এখানে সকাল হয় না, সকাল আসে... কার লেখা, কোন উপন্যাস, অনেকেই জানেন।  গল্পটা এরকম... ডিসেম্বরে হুট্ করে বাইক নিয়ে কোথাও যাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু থাকার জায়গা পেতে চাপ হয়। যেমন এবার হোলো ! ম্যাপ খুঁজে খুঁজে হোমস্টে দেখছি আর ফোন করে যাচ্ছি, ' নাহঃ, ওই সময় ফাঁকা নেই', বেশ কয়েক জায়গা থেকে এক উত্তর পেয়ে ভাবছি কি করবো ! তখনই আমায়রা হোমস্টে-র ওনার রাজ কিশোর গুপ্তা রিং ব্যাক করে 'ম্যাক গার্ডেন-র' হোমস্টে-র কেয়ার টেকার মনজয় দার ফোন নম্বর দিলেন। কল করে জানালাম, পরের দিন যাচ্ছি, একটা ঘরই আমার লাগবে। দু-তিন থাকবো বলাতে বললো, দুদিনই হবে তিন নম্বর দিন অলরেডি বুকড। সাত একর জমির এক কোণে এক কোলোনিয়াল বিল্ডিং, মানে টালির ছাদের কুঁড়েঘর। আম বাগানে ঘেরা, বিরাট এক লন সামনে। গেটের ডানদিকে আলু, সর্ষের খেত। টিয়া, ধূসর রঙের ধনেশ চোখের সামনে নেচে বেড়াচ্ছে। বাড়ির ভেতরে তিনটে পার্টিশন, প্রথম দরজা দিয়ে ঢুকেই বসার জায়গা আর দুই প্রান্তে দুটো ঘর। ওই জায়গা পেরিয়ে পেড়িয়ে আবার আর একটা দরজা ও দুই প্রান্তে ডান দিকে-বাঁদিকে দুটো ঘর। মাঝের বসার জায়গায় একটা ফায়ারপ্লেস। শীতকালে গেলে দিব্বি জ্বালিয়ে রাত কাটানো য

My days in the Gunj 2

Since couple of months planning to go in the Gunj but due to some other directions wasn't able to reach there. Finally at the end of year 2023 reached there, stayed in the colonial hut and explored the place on my motorcycle. The Gunj means the McCluskieganj, during mid nineties this hamlet was known as Mini England as it was the place for Anglo-Indians. But now only few family of Anglo-Indians are living here. Yeah, here is scope to stay in the colonial tiles hut as few of the homes are still maintaining the traditional home. I reached on 22nd of December, and had an advanced booking as this time become so crowded due to the holiday and festive season. While I was looking for my stay in Gunj as I used to do getting the contacts from google and calling them. Most of the homestay were not vacant on the dates which I decided to be there, but from the owner of Amyra homestay got a contact of Manojay the care taker Mac Garden and for 2 days he has a room. Here is a story, Mr. Raj Kisho