Skip to main content

কদম ফুল - Kadam phool- common burflower

বর্ষাকালের সিগনেচার বলা হয় কদম ফুলকে, আরেক নাম নীপ, "এসো নীপ বনে ... " কবিতা তো জানাই আছে যাতে বর্ষা মানেই নীপ ( কদম্ব বলে অনেক রাজ্যে )  খুব পরিচিত এই ফুল, নিটোল গোলাকার, প্রথমে সবুজ, পরে লাল থেকে টকটকে কমলা রঙের সাথে অসংখ্য লম্বা সাদা ফ্রিলস পুরো ফুল জুড়ে   হাতে নিলে বোঝা যায় বেশ একটু ভারী, মানে কাউকে ঢিল ছুড়ে মারার মতো আর ওই সাদা ফ্রিলস গুলো এমনিতে নরম কিন্তু ছুড়লে হুঁহুঁ, লাগবে বেশ। খুব মিষ্টি একটা গন্ধ আছে, গাছের পাস দিয়ে গেলেই টের পাওয়া যায় ফুল ফুটেছে  ( কদম তলায় কে ?) প্রচুর ফ্র্যাংগনান্স বা আতর তৈরি হয় এই গন্ধের।




আমাদের দেশের লিপিগুলোতে কদম ফুলের গাছের নাম আছে আর আমাদের পৌরাণিক কথকথায় কদম ফুলের বড়ো মুখ্য একটা জায়গা আছে।  ভারতের উত্তর দিকে, ভগবৎ পুরান থেকে শুরু রাধা কৃষ্ণের দুজনের জীবনেই  কদম ফুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  বৃন্দাবন-মথুরায়, গোবর্দ্ধন পাহাড়ের দিকে  প্রচুর কদম গাছ, এই সময় মানে বর্ষাকালে একবার রাধে-রাধে করে ওই রাস্তায় গেলে দেখতে পাবেন, ঘন সবুজ গাছে কমলা-হলুদ সাদা ফ্রিলসের ফুল ছেয়ে আছে, সাথে মন মাতানো ওই গন্ধ।


ভারতের দক্ষিণেও কদম ফুলের কম গুরুত্ব নয়। মাদুরায়ের মীনাক্ষী মন্দিরে ঢোকার মুখে এক কদম ফুলের গাছ আছে, ফুল ফুটলে পাতা দেখা যায় না, সে গাছের। এই ফুলের নামে কর্ণাটকের বানভাসিতে ৩৪৫-৫৩০ খ্রিস্টাব্দে  'কদম্ব রাজবংশ ' নাম আছে আর কদম ফুলের গাছকে তাঁরা বড়ো পবিত্র মনে  করেন। কর্ণাটকের  তুলু সম্প্রদায় ভাদ্র মাসে 'করম-কদম্ব' বা কদমৎসব নামে এক  উৎসব পালন করেন, যতদূর জানি কদম গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে এই উৎসব পালন হয়, আর একটা নতুন ফুলভর্তি গাছের আশায়। কদম গাছ খুব সহিষ্ণুগাছ, একখানা ডাল  ভেঙে মাটিতে পুঁতে দিলেই দিব্বি গাছ দাঁড়িয়ে যায়।




এবার নিজের অভিজ্ঞতা একটু বলি : তখন ক্লাস ইলেভেন, উচ্চ মাধ্যমিক দেবো।  আমার বাড়িতে একখানা বিরাট আকারের কদম গাছ ছিল, প্রচুর ফুল ধরতো, মানে ভরা ভরসায় সে গাছের নিচে দাঁড়ালে মাথায় ঢিল পড়বেই, গ্যারান্টি।  তো, সেরকম বৃষ্টিতে কোনো এক বিকালে সেদিন মেঘ-বৃষ্টি বিশ্রাম করায় সূর্যাস্থের আলো দেখা যাচ্ছে। আমি ম্যানুয়ালি তরমুজের রস বানিয়ে, এক খানা কাঁচের গ্লাসে এই লাল রস নিয়ে, কদম গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি। গাছের নিচে অনেক ফুল পরে পেঁচকে, চোটকে আছে। সেদিনের বিকাল বেশ ভালো, হাল্কা হাওয়া বইছে, বৃষ্টি থেমেছে, কিন্তু  ম্যানুয়ালি  রস বানানোর জন্য ভালো ক্রাশ হয়নি তরমুজ ফলে স্মুথলি রস খাওয়া যাচ্ছে  না। মাথা ৯০ ডিগ্রি করে গাছের ফুলগুলো দেখছিলাম।  হটাৎ কথা থেকে একখানা বেশ বড়ো সাদা ফ্রিলস লাগানো ফুল আমার ঠিক দুই ভুরুর মাঝে এতো জোড়ে আছড়ে পড়লো, আমি কিছুক্ষন সর্ষে ফুল দেখলাম।  ধাতস্ত্য হয়ে খেয়াল হলো, ওই ফুল আমার  কপালে বাউন্স খেয়ে লাল তরমুজের রসে গিয়ে পড়েছে। কমলা ফুল, লাল রসে দেখতে ভালোই লাগছিলো। কপালে বেশ ব্যাথা করছে, আয়নায় গিয়ে দেখি, কপালে  টিপের মতো লাল হাফ সার্কেল হয়ে গেছে। বিকালে কেমিস্ট্রির টিউশন ছিল, স্যারকে ফোন করে যাবো না, তার সত্যি কারণ বলায় শুনতে হয়েছিল ' মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাস্ না'



এই কদম ফুলের গাছ  ট্রপিকাল আর  শুধু ভারত, বাংলাদেশ নয়, মোটামুটি দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই আছে, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মায়ানমার, অস্ট্রেলিয়াতেও দেখেছি

Comments

Popular posts from this blog

রাগের ছবি

১ ) মেঘ মল্লার : মেঘ ( সংস্কৃত বুৎপত্তি ) মল্লার একটি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় মৌসুমী   রাগ।   কথায় বলে এই রাগ বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ করে যেখানে গাওয়া হয় সেখানে। ' মেঘ মল্লার ' রাগ মেঘের অনুরূপ যার মধ্যে মল্লারের আভা রয়েছে। মল্লার পরিবারের অন্যান্ন রাগগুলি হলো : মেঘ , মিয়াঁ কি মল্লার , গৌড় মল্লার , রামদাসী মল্লার , ধুলিয়া মল্লার ইত্যাদি। ঠাট : কাফি। আমাজন প্রাইমের ' বন্দিশ ব্যান্ডিট ' ওয়েব সিরিজের লাস্ট এপিসোডে ফরিদ হাসান আর মোহাম্মদ আমান মেঘ মল্লার গেয়েছে এবং তাতে বৃষ্টি এসেছে। শঙ্কর - এহসান - লয় এই   গানের দ্বায়ীত্বে ছিলেন। একটা আর্টিকলে তাদের কথা পড়লাম যে , যোধপুরে ২০২০ - র এপ্রিল মাসে এই গানটা যেদিন পুরো গাওয়া হয়েছিল সত্যি বৃষ্টি পড়েছিল , যা কোনোদিনও হয় নি নাকি। ২ ) গৌড় মল্লার :   হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগ যা মল্লারের বৈশিষ্ট্য বহন করে আর এই   ' গৌড় ' নামের রাগটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে , মানে সে রকম করে কেউ গায় না । মল্লার পরিবারের

My days in the Gunj

এখানে সকাল হয় না, সকাল আসে... কার লেখা, কোন উপন্যাস, অনেকেই জানেন।  গল্পটা এরকম... ডিসেম্বরে হুট্ করে বাইক নিয়ে কোথাও যাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু থাকার জায়গা পেতে চাপ হয়। যেমন এবার হোলো ! ম্যাপ খুঁজে খুঁজে হোমস্টে দেখছি আর ফোন করে যাচ্ছি, ' নাহঃ, ওই সময় ফাঁকা নেই', বেশ কয়েক জায়গা থেকে এক উত্তর পেয়ে ভাবছি কি করবো ! তখনই আমায়রা হোমস্টে-র ওনার রাজ কিশোর গুপ্তা রিং ব্যাক করে 'ম্যাক গার্ডেন-র' হোমস্টে-র কেয়ার টেকার মনজয় দার ফোন নম্বর দিলেন। কল করে জানালাম, পরের দিন যাচ্ছি, একটা ঘরই আমার লাগবে। দু-তিন থাকবো বলাতে বললো, দুদিনই হবে তিন নম্বর দিন অলরেডি বুকড। সাত একর জমির এক কোণে এক কোলোনিয়াল বিল্ডিং, মানে টালির ছাদের কুঁড়েঘর। আম বাগানে ঘেরা, বিরাট এক লন সামনে। গেটের ডানদিকে আলু, সর্ষের খেত। টিয়া, ধূসর রঙের ধনেশ চোখের সামনে নেচে বেড়াচ্ছে। বাড়ির ভেতরে তিনটে পার্টিশন, প্রথম দরজা দিয়ে ঢুকেই বসার জায়গা আর দুই প্রান্তে দুটো ঘর। ওই জায়গা পেরিয়ে পেড়িয়ে আবার আর একটা দরজা ও দুই প্রান্তে ডান দিকে-বাঁদিকে দুটো ঘর। মাঝের বসার জায়গায় একটা ফায়ারপ্লেস। শীতকালে গেলে দিব্বি জ্বালিয়ে রাত কাটানো য