Skip to main content

হ্যালোউইন

প্রাচীন সেল্টিক উৎসব সো-ইন থেকে হ্যালোউইনের উৎপত্তি। হ্যালোউইন হল এক ছুটির দিন, যা প্রতি বছর ৩১শে অক্টোবর পালিত হয়। প্রায় 2,000 বছর আগে সেল্টস প্রজাতি বসবাস করত মূলতঃ বর্তমান আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর ফ্রান্স-এ আর তারা ভূত তাড়াতে নতুন পোশাক পরে কিম্ভুত সেজে আগুন জ্বালাতো। পয়লা নভেম্বর ছিল তাদের নতুন বছর উদযাপনের দিন।





আসলে এই দিনটা গ্রীষ্মের শেষ, শীতের শুরু, ফসল কাটা কে চিহ্নিত করে। সেসময় বছরের এই সময়টায় প্রায়শই মানুষের মৃত্যু হতো, তাই সেল্টসরা বিশ্বাস করতেন যে নতুন বছরের আগের রাতে, জীবিত এবং মৃত মানুষের মধ্যে ব্যবধান দূর হয়ে যায় আর আজকের দিনটায় মৃতদের আত্মা পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই ছিল "সো-ইন" উৎসব।
আসন্ন শীতের ঠান্ডা ও অন্ধকারকে আরামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল এই হ্যালোউইন। ওই দিনের সন্ধ্যায় ড্রুইডরা বিশাল বনফায়ার তৈরি করেছিল, যেখানে লোকেরা সেল্টিক দেবতাদের বলি হিসাবে ফসল এবং পশু পোড়ানোর জন্য জড়ো হয়েছিল। সময় উদযাপনের সময়, সেল্টরা পোষাক পরিধান করত, সাধারণত পশুর মাথা এবং চামড়া সমন্বিত, এবং একে অপরের ভাগ্য বলার চেষ্টা করত।
খ্রিস্টাব্দ ৪৩ সনে রোমানরা বেশিরভাগ সেল্টিক এলাকা কব্জা করে নেয় আর ৪০০ বছর ধরে তারা সেল্টিক ভূমি শাসন করেছিল। ফলত, সেল্টিকদের ঐতিহ্যবাহী সো-ইন উৎসবে রোমানরা মিলিত হলো আর ধীরে ধীরে অক্টোবরের শেষের একটি দিনে যখন রোমানরা ঐতিহ্যগতভাবে মৃতদের মৃত্যুকে স্মরণ করত। হ্যালোউইন উদযাপন করা শুরু করলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোউইন : ঔপনিবেশিক নিউ ইংল্যান্ডে হ্যালোইন উদযাপন অত্যন্ত সীমিত ছিল কারণ সেখানে কঠোর প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্বাসী ছিল। তবে হ্যালোইন মেরিল্যান্ড এবং দক্ষিণ উপনিবেশে অনেক বেশি উদযাপিত হতো । বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতিগত গোষ্ঠী, আমেরিকান ভারতীয়দের বিশ্বাস এবং রীতিনীতিগুলি মিশে যাওয়ার সাথে সাথে হ্যালোউইনের একটি স্বতন্ত্র আমেরিকান সংস্করণ আবির্ভূত হতে শুরু করে। প্রথম উদযাপনের মধ্যে "প্লে পার্টি" অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ফসল কাটার উদযাপনের জন্য সর্বজনীন অনুষ্ঠান ছিল যেখানে প্রতিবেশীরা সকলে মৃতদের গল্প শেয়ার করবে, একে অপরের ভাগ্য বলবে, নাচ-গানের মাধ্যমে উৎসব পালন করবে ।
১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে, আমেরিকায় নতুন জনপ্লাবন ঘটেছিলো। এই নতুন অভিবাসীরা, বিশেষ করে লক্ষ লক্ষ দীন দরিদ্র, সর্বহারার দুর্ভিক্ষ থেকে পালিয়ে আসা আইরিশরা সর্ব সমক্ষে হ্যালোইন উদযাপনকে জনপ্রিয় করতে সাহায্য করেছিল।
হ্যালোইন ট্রিক-অর-ট্রিটিং এর ইতিহাস : ইউরোপীয় ঐতিহ্য থেকে ধার করে, আমেরিকানরা পোশাক পরতে শুরু করে এবং ঘরে ঘরে খাবার বা অর্থের জন্য জিজ্ঞাসা করে, এমন একটি অভ্যাস যা অবশেষে আজকের "ট্রিক-অর-ট্রিট" ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে |
১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে, একটি সম্পূর্ণ সম্প্রদায়ের জন্য হ্যালোইন উদযাপন ভাগাভাগি করার জন্য ট্রিক-অর-ট্রিটিং একটি অপেক্ষাকৃত সস্তা উপায় বের হলো দরিদ্র পরিবারগুলি আশেপাশের শিশুদেরকে খাবার দেবার মাধ্যমে এবং তারফলে তাদের উপর চালানো নানান নির্যাতন কিছুটা প্রতিরোধ করা গেলো। ট্রিক-অর-ট্রিটিং-এর আমেরিকান হ্যালোইন ঐতিহ্য সম্ভবত ইংল্যান্ডের প্রারম্ভিক "অল সোলস ডে প্যারেডের " সময়কার। উৎসব পরিবারের মৃত আত্মীয়দের জন্য প্রার্থনা করার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে দরিদ্র পরিবারগুলিকে তাদের "সোল কেক" নামক পেস্ট্রি দেবে। বিচরণকারী আত্মাদের জন্য খাদ্য ও ওয়াইন ত্যাগ করার প্রাচীন অভ্যাসকে প্রতিস্থাপন করার উপায় হিসাবে গির্জা দ্বারা সোল কেক বিতরণকে উদযাপিত করা হয়েছিল।
এইভাবে, এক নতুন আমেরিকান হ্যালোউইনের জন্ম হয়েছিল যা আজ ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশেও। একটা তথ্য : বছরের বিক্রি হওয়া সমস্ত ক্যান্ডির এক চতুর্থাংশ আমেরিকায় এখন হ্যালোইনের জন্য কেনা হয়।
হ্যালোউইন এখন আমেরিকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ছুটি বড়দিনের পরে।
হ্যালোউইনের জন্য পরিধিত বিচিত্র পোশাকের ঐতিহ্যে ইউরোপীয় এবং সেল্টিক সভ্যতার অবদান রয়েছে : শত শত বছর আগে প্রাশ্চাত্য দেশ গুলোতে শীতকাল ছিল এক ভীতিকর, অনিশ্চিতের সময়। এই সময়ে খাবারের অভাব ছিল, প্রচন্ড ঠান্ডা আর তাড়াতাড়ি সূর্যাস্তের ফলে শীতের ছোট দিনগুলি ক্রমাগত উদ্বেগে পূর্ণ ছিল অধিকাংশ মানুষের মধ্যে। তারা বিশ্বাস করতো মৃতেরা ভূত হয়ে তাদের আত্মা এই পৃথিবীতে ঘুড়ে বেড়ায়। তারা তাদের বাড়ি ছেড়ে বেরোলেই সেইসব ভূতের মুখোমুখি হতে হবে। তাই তারা কিম্ভুত কিমাকার সব পোশাক-মুখোশ পরত অন্ধকারে পরে তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যাতে আসে পাশের ভূতরা তাদেরকে নিজেদের সমগোত্র মানে ভূত ভাবে।






হ্যালোইনের কিছু রীতিনীতি ও আচার-বিচার :
১) হ্যালোইনে দিনটা সবসময়- রহস্য, জাদু-টোনা এবং কুসংস্কারে ভরা একটি ছুটির দিন হিসাবে পালন হয়েছে। এই দিনটিতে আত্মা ও ভূতদের তাদের ঘর থেকে দূরে রাখার জন্য, মৃতের পরলোক গত আত্মাকে শান্ত রাখার জন্য, জীবিতদের বাড়িতে যাতে ভূতেরা ঢুকতে না পারে তার জন্য বাড়ির বাইরে খাবার রাখত।
2) হ্যালোইন ম্যাচমেকিং : অনেক মেয়েরা তাদের ভবিষ্যৎ বরকে চিনতে এই অদ্ভুত রিচুয়াল পালন করতো, যা হলো শতকের আয়ারল্যান্ডে, একজন ম্যাচমেকিং রাঁধুনি হ্যালোউইনের রাতে তার ম্যাশড আলুতে (আলু সেদ্ধ ) এক আংটি পুঁতে রাখে। ডিনারের সময় যে ওই আলু সেদ্ধ থেকে ওই অংটি খুঁজে পাবে সেই তার এজন্মের বড় হবে আর যদি সে বিবাহিত হয় তো পরের জন্মের বর।
৩) অস্থায়ী প্রেমের প্রতীক : বিবাহ যোগ্য এক মেয়ে তার পছন্দের ছেলেদের নাম রেখে একটা করে বাদাম আগুনে ছুড়ে দেবে। যে বাদামটি পপিং বা বিস্ফোরিত না হয়ে পুড়ে ছাই হবে সেই তার বর হবে।
৪) আরেকটি গল্পে বলা হয়েছে যে হ্যালোউইনের রাতে ঘুমানোর আগে যদি অবিবাহিত মেয়ে আখরোট, হ্যাজেলনাট এবং জায়ফল দিয়ে তৈরিএক খাবার খায়, তবে নিশ্চিত ভাবে সে তার ভবিষ্যত স্বামীর স্বপ্ন দেখবে।
৫) অল্পবয়সী মেয়েরা তাদের কাঁধের উপর আপেলের খোসা ফেলে দেয়, এই আশায় যে খোসাগুলি তাদের ভবিষ্যতের স্বামীর আদ্যক্ষরগুলির আকারে মেঝেতে পড়বে।
৬) এটি গ্রীষ্মের শেষ দিনে উৎসব হিসাবে শুরু হয়েছিল। লোকেরা তাদের মৃত আত্মীয় এবং বন্ধুদের কাছাকাছি অনুভব করেছিল তাই এই বন্ধুত্বপূর্ণ সময়টা আত্মাদের জন্য তারা রাতের খাবারের টেবিলে জায়গাগুলি সাজিয়ে দরজার পাশে এবং রাস্তার পাশে খাবার ও উপহার রেখে যাতে তাদের প্রিয়জনকে আত্মার জগতে ফিরে যেতে সাহায্য করা যায়।
৭) হ্যালোইনে কালো বিড়াল এবং ভূত : এখনো অনেকে কালো বিড়ালদের সাথে পাথ অতিক্রম করা এড়িয়ে চলি, এই ভয়ে যে তারা আমাদের দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসতে পারে। এই ধারণার শিকড় রয়েছে মধ্যযুগেও, যখন অনেক লোক বিশ্বাস করত যে ডাইনিরা নিজেদের কালো বিড়ালে পরিণত করে ফল তাদের চেনা দায়।
৮) জলের পাত্রে ভাসমান ডিমের কুসুম দেখে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে বা অন্ধকার ঘরে আয়নার সামনে মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে তাদের বরের মুখের / কাঁধের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
৯) প্রতিযোগিতামূলক রীতিনীতিও রয়েছিল কিছু : কিছু হ্যালোইন পার্টিতে, চেস্টনাট-হান্টে একটি বর খুঁজে পাওয়া প্রথম অতিথিকে বিয়ে করা হবে।
ছবিটা মেক্সিকোর এক টাকিলা দোকানের

Comments

Popular posts from this blog

কদম ফুল - Kadam phool- common burflower

বর্ষাকালের সিগনেচার বলা হয় কদম ফুলকে , আরেক নাম নীপ , " এসো নীপ বনে ... " কবিতা তো জানাই আছে যাতে বর্ষা মানেই নীপ ( কদম্ব ও বলে অনেক রাজ্যে ) ।   খুব পরিচিত এই ফুল , নিটোল গোলাকার , প্রথমে সবুজ , পরে লাল থেকে টকটকে কমলা রঙের সাথে অসংখ্য লম্বা সাদা ফ্রিলস পুরো ফুল জুড়ে ।   হাতে নিলে বোঝা যায় বেশ একটু ভারী , মানে কাউকে ঢিল ছুড়ে মারার মতো আর ওই সাদা ফ্রিলস গুলো এমনিতে নরম কিন্তু ছুড়লে হুঁহুঁ , লাগবে বেশ। খুব মিষ্টি একটা গন্ধ আছে , গাছের পাস দিয়ে গেলেই টের পাওয়া যায় ফুল ফুটেছে   ( কদম তলায় কে ?) । প্রচুর ফ্র্যাংগনান্স বা আতর তৈরি হয় এই গন্ধের। আমাদের দেশের লিপিগুলোতে কদম ফুলের ও গাছের নাম আছে আর আমাদের পৌরাণিক কথকথায় কদম ফুলের বড়ো মুখ্য একটা জায়গা আছে।   ভারতের উত্তর দিকে , ভগবৎ পুরান থেকে শুরু রাধা ও কৃষ্ণের দুজনের জীবনেই   কদম ফুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।   বৃন্দাবন - মথুরায় , গোবর্দ্ধন পাহাড়ের দিকে   প্রচুর কদম গাছ , এই সময় মানে বর্ষাকালে একবার রাধে - রাধে

My days in the Gunj

এখানে সকাল হয় না, সকাল আসে... কার লেখা, কোন উপন্যাস, অনেকেই জানেন।  গল্পটা এরকম... ডিসেম্বরে হুট্ করে বাইক নিয়ে কোথাও যাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু থাকার জায়গা পেতে চাপ হয়। যেমন এবার হোলো ! ম্যাপ খুঁজে খুঁজে হোমস্টে দেখছি আর ফোন করে যাচ্ছি, ' নাহঃ, ওই সময় ফাঁকা নেই', বেশ কয়েক জায়গা থেকে এক উত্তর পেয়ে ভাবছি কি করবো ! তখনই আমায়রা হোমস্টে-র ওনার রাজ কিশোর গুপ্তা রিং ব্যাক করে 'ম্যাক গার্ডেন-র' হোমস্টে-র কেয়ার টেকার মনজয় দার ফোন নম্বর দিলেন। কল করে জানালাম, পরের দিন যাচ্ছি, একটা ঘরই আমার লাগবে। দু-তিন থাকবো বলাতে বললো, দুদিনই হবে তিন নম্বর দিন অলরেডি বুকড। সাত একর জমির এক কোণে এক কোলোনিয়াল বিল্ডিং, মানে টালির ছাদের কুঁড়েঘর। আম বাগানে ঘেরা, বিরাট এক লন সামনে। গেটের ডানদিকে আলু, সর্ষের খেত। টিয়া, ধূসর রঙের ধনেশ চোখের সামনে নেচে বেড়াচ্ছে। বাড়ির ভেতরে তিনটে পার্টিশন, প্রথম দরজা দিয়ে ঢুকেই বসার জায়গা আর দুই প্রান্তে দুটো ঘর। ওই জায়গা পেরিয়ে পেড়িয়ে আবার আর একটা দরজা ও দুই প্রান্তে ডান দিকে-বাঁদিকে দুটো ঘর। মাঝের বসার জায়গায় একটা ফায়ারপ্লেস। শীতকালে গেলে দিব্বি জ্বালিয়ে রাত কাটানো য

My days in the Gunj 2

Since couple of months planning to go in the Gunj but due to some other directions wasn't able to reach there. Finally at the end of year 2023 reached there, stayed in the colonial hut and explored the place on my motorcycle. The Gunj means the McCluskieganj, during mid nineties this hamlet was known as Mini England as it was the place for Anglo-Indians. But now only few family of Anglo-Indians are living here. Yeah, here is scope to stay in the colonial tiles hut as few of the homes are still maintaining the traditional home. I reached on 22nd of December, and had an advanced booking as this time become so crowded due to the holiday and festive season. While I was looking for my stay in Gunj as I used to do getting the contacts from google and calling them. Most of the homestay were not vacant on the dates which I decided to be there, but from the owner of Amyra homestay got a contact of Manojay the care taker Mac Garden and for 2 days he has a room. Here is a story, Mr. Raj Kisho