Skip to main content

রাগের ছবি

) মেঘ মল্লার : মেঘ (সংস্কৃত বুৎপত্তি ) মল্লার একটি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় মৌসুমী  রাগ।  কথায় বলে এই রাগ বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ করে যেখানে গাওয়া হয় সেখানে। 'মেঘ মল্লার' রাগ মেঘের অনুরূপ যার মধ্যে মল্লারের আভা রয়েছে। মল্লার পরিবারের অন্যান্ন রাগগুলি হলো : মেঘ, মিয়াঁ কি মল্লার, গৌড় মল্লার, রামদাসী মল্লার, ধুলিয়া মল্লার ইত্যাদি।

ঠাট : কাফি।





আমাজন প্রাইমের 'বন্দিশ ব্যান্ডিট' ওয়েব সিরিজের লাস্ট এপিসোডে ফরিদ হাসান আর মোহাম্মদ আমান মেঘ মল্লার গেয়েছে এবং তাতে বৃষ্টি এসেছে। শঙ্কর-এহসান-লয় এই  গানের দ্বায়ীত্বে ছিলেন। একটা আর্টিকলে তাদের কথা পড়লাম যে, যোধপুরে ২০২০- এপ্রিল মাসে এই গানটা যেদিন পুরো গাওয়া হয়েছিল সত্যি বৃষ্টি পড়েছিল, যা কোনোদিনও হয় নি নাকি।


) গৌড় মল্লার :  হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগ যা মল্লারের বৈশিষ্ট্য বহন করে আর এই  'গৌড়' নামের রাগটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, মানে সে রকম করে কেউ গায় না মল্লার পরিবারের সব গেলো রাগই অত্যন্ত জনপ্রিয়, মরশুমি চিত্তাকর্ষক কল্পনা যুক্ত। ঐতিহ্যগত ভাবে উল্লেখযোগ্য মালহার রাগ গুলি হিন্দুস্তানি মেলোডিক ফ্রেমওয়ার্কে আবদ্ধ 'গৌড় মল্লার ', মল্লার পরিবারের রাগগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম এই রাগ মিয়াঁ মল্লারের পূর্বাভাস দেয়। নাম থেকে বোঝা যায়, রাগের মৌলিক বিল্ডিং ব্লকগুলো গৌড়   শুদ্ধ মল্লারের সমষ্টি যার উৎপত্তি মূলতঃ বাংলায় কিন্তু এই রাগ বেশি আদর-যত্ন পেয়েছে মহারাষ্ট্র গোয়ায় বিলাওয়াল থেকে এই রাগের বাকি উপাদান গুলো এসেছে এই অদ্ভত বৈচিত্র্য এই রাগটিকে এক বিশেষ সঞ্চারী দিয়েছে  কিন্তু আগেই বললাম এখন সেরকম এই রাগ কেউ সাধনা করেন না গৌড় মল্লার খুব চড়া গলায় গাইতে হয়





গৌড় মল্লারের আরও কয়েকটি সংস্করণ আছে এক: কেবল কোমল গান্ধারদুই : দুটো গান্ধার সমন্ধয়, আর তিন : গান্ধারের ব্যবহার কম খাম্বাজের প্রভাব বেশি এক দুই বেশিরভাগই ধ্রুপদ লয়ে গাওয়া হয়। বেশ পুরোনো দিনের হিন্দি সিনেমায় গৌড় মল্লারের ওপর অনেক গান তৈরি হয়েছে লতা মঙ্গেশকর, আলী আকবর খাঁ   রবি শংকর, এদের মিলিত এক ট্রাডিশনাল বন্দিশ আছে, যেটা ১৯৫১ সালে 'মল্লার' নামে এক সিনেমায় আছে যা পুরোটাই গৌড় মল্লারের ওপর গাওয়া


টোড়ী : মিয়াঁ তানসেনের নামানুসারে 'মিয়াঁ কি টোড়ী', যাকে প্রায়শই টোড়ী বা দরবারি টোড়ী বলা হয়। এটি একটি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় রাগ। সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখন্ডের মতে শাস্ত্রীয় সংগীতের দশ ধরনের মধ্যে এটা একটা। টোড়ী রাগের পরিবারের অন্যান্ন রাগগুলি হলোহিন্দুস্তানি টোড়ী (মিয়াঁ কি টোড়ী), বিলাসখানি টোড়ী, গুজারি টোড়ী, দেশি টোড়ী, হুসেইনি টোড়ী, আশাবরী টোড়ী (যা সাধারণত আশাবরী নামে পরিচিত) এবং বাহাদুরি টোড়ী।  কর্ণাটিক সঙ্গীতের সমতুল্য রাগ হল শুভপান্তুরালী। মিয়াঁ কি টোড়ী রাগের সঙ্গে কর্নাটক টোড়ীর কোনো মিল নেই।

ঠাট : টোড়ী





আশাবরী : রাগ আশাবরী একটি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় রাগ। এটি আশাবরী থাটের অন্তর্গত এবং সকালে গাওয়া হয় | যখন পণ্ডিত বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখন্ডে উত্তর ভারতীয় রাগগুলিকে দশ ঠাটে বিভক্ত করেছিলেন, তখন তিনি ঠাটের মূল রাগ হিসাবে আশাবরী (শুদ্ধ 'রে' সহ) বেছে নিয়েছিলেন। তার আগে এই আশাবরী শুদ্ধ 'রে'- পরিবর্তে কোমল 'রে' ব্যবহার হতো

আশাবরীর  মূল সংস্করণটি চারটি কোমল স্বর ব্যবহার করেছে - অনেকটা ভৈরবীর মতো। এটি তখন আশাবরীর আধুনিক সংস্করণকে জনপ্রিয়তা দেয়, যা শুদ্ধ 'রে' ব্যবহার করে কিন্তু কোমল 'গা', 'ধা' এবং 'নী' ব্যবহার করে। 

আসল আশাবরী এখন 'কোমল রিশব' (রে) আশাবরী' নামে পরিচিত। আধুনিক আশাবরী জৌনপুরীর কাছে জনপ্রিয়তা অর্পণ করে। মজার ব্যাপার হল, শুদ্ধ 'রে' আশাবরী থেকে জৌনপুরীতে মানুষের পছন্দের স্থানান্তরের সাথে, কোমল 'রে' আশাবরী এক ধরণের প্রত্যাবর্তন করেছে। কয়েকজন পণ্ডিতদের মতে আশাবরী আর  জৌনপুরী কোনো আলাদা রাগ নয়। 

আশাবরীর দরবারির সমান স্কেল রয়েছে। তাই এই রাগ দরবারি সাথে অনেকের গুলিয়ে যায়।

আশাবরীর সাথে জৌনপুরী রাগের মিল হওয়ার কারণ : উত্তর প্রদেশের জৌনপুর ছিল সুলতানি আমলের রাজধানী শহর যা চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে তুঘলকদের থেকে মুক্ত হয় আর প্রায় এক শতাব্দী স্বাধীন ছিল পরে লোধীরা আবার আক্রমণ করে। তৎকালীন জৌনপুরের শাসকগণ শিল্পকলার প্রখর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং সর্বশেষ - সুলতান হুসেইন শারকি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। তাই হয়তো আশাবরীর স্বরে জৌনপুরীর এক শ্রুতি-গন্ধ বিকশিত হয়েছিল।








) সারং : হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় রাগ যার অন্য নাম হলো বৃন্দাবনী সারং 'সারং' প্রেম প্রকাশের রাগ, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের রাগ এক কথায় 'রোমান্টিক' রাগ এই রাগ স্বামী হরিদাস তৈরি করেছিলেন এক মনোহর পৌরাণিক কাহিনী জড়িয়ে আছে এই রাগের সাথে, যে  তিনি নাকি সারং গেয়ে শ্রীকৃষ্ণকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন তারপর, শ্রীকৃষ্ণ মূর্তির রূপ নিয়েছিলেন যেটা এখন মথুরায় রয়েছে সে মূর্তি তাই তো 'বৃন্দাবনী সারং' এখনো মথুরায় তার আশেপাশে খুব জনপ্রিয়, সেখানে সবাই সারংগুনগুন করে গায়


এই রাগে গা এবং ধা  ব্যবহার করা হয় না বৈশিষ্ট্য মূলক ভাবে সব সারঙ্গে 'রে' -এর ওপর বিশেষ জোর থাকে আর সা-নি-পা জোরালো স্বর এতে সারং- ঠাট কাফি, যা এক অদ্ভুত সমাহার বিশেষতঃ কাফি ঠাটের আরোহতে এখানে শুদ্ধ 'নি ' আছে  কিন্তু এদিকে কোমল নি গা হলো ঠাট কাফির  মূল বৈশিষ্ট সম্ভবতঃ সেই কারণে অনেকের খাম্বাজের সাথে সারং অনেক সময় গুলিয়ে যায়


পদ্মাবৎ হিন্দি সিনেমায় "ঘুমর ঘুমর  ..." গানটা সারং রাগের ওপর তৈরি





) দেব গান্ধার : রাগ দেব গান্ধার একটি খুব মিষ্টি রাগউভয় গান্ধারদের প্রয়োগে এক সুরেলা স্বর ধ্বনির সমাহার এই রাগ এই রাগ জৌনপুরী রেজার মতো করে বিস্তার পেয়েছে   রাগ গান্ধারীর সাথে এই রাগের যথেষ্ট মিল রয়েছে , কিন্তু  রাগ গান্ধারীতে শুদ্ধ রে-এর জায়গায় কোমল রে ব্যবহার হয়েছে  


সকালের  দিকে দেব গান্ধার গাওয়া হয়





গত রবিবার মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম ছবি গুলো 'পেইন্টিং বিভাগ' থেকে তুলেছি।


Comments

Popular posts from this blog

কদম ফুল - Kadam phool- common burflower

বর্ষাকালের সিগনেচার বলা হয় কদম ফুলকে , আরেক নাম নীপ , " এসো নীপ বনে ... " কবিতা তো জানাই আছে যাতে বর্ষা মানেই নীপ ( কদম্ব ও বলে অনেক রাজ্যে ) ।   খুব পরিচিত এই ফুল , নিটোল গোলাকার , প্রথমে সবুজ , পরে লাল থেকে টকটকে কমলা রঙের সাথে অসংখ্য লম্বা সাদা ফ্রিলস পুরো ফুল জুড়ে ।   হাতে নিলে বোঝা যায় বেশ একটু ভারী , মানে কাউকে ঢিল ছুড়ে মারার মতো আর ওই সাদা ফ্রিলস গুলো এমনিতে নরম কিন্তু ছুড়লে হুঁহুঁ , লাগবে বেশ। খুব মিষ্টি একটা গন্ধ আছে , গাছের পাস দিয়ে গেলেই টের পাওয়া যায় ফুল ফুটেছে   ( কদম তলায় কে ?) । প্রচুর ফ্র্যাংগনান্স বা আতর তৈরি হয় এই গন্ধের। আমাদের দেশের লিপিগুলোতে কদম ফুলের ও গাছের নাম আছে আর আমাদের পৌরাণিক কথকথায় কদম ফুলের বড়ো মুখ্য একটা জায়গা আছে।   ভারতের উত্তর দিকে , ভগবৎ পুরান থেকে শুরু রাধা ও কৃষ্ণের দুজনের জীবনেই   কদম ফুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।   বৃন্দাবন - মথুরায় , গোবর্দ্ধন পাহাড়ের দিকে   প্রচুর কদম গাছ , এই সময় মানে বর্ষাকালে একবার রাধে - রাধে

My days in the Gunj

এখানে সকাল হয় না, সকাল আসে... কার লেখা, কোন উপন্যাস, অনেকেই জানেন।  গল্পটা এরকম... ডিসেম্বরে হুট্ করে বাইক নিয়ে কোথাও যাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু থাকার জায়গা পেতে চাপ হয়। যেমন এবার হোলো ! ম্যাপ খুঁজে খুঁজে হোমস্টে দেখছি আর ফোন করে যাচ্ছি, ' নাহঃ, ওই সময় ফাঁকা নেই', বেশ কয়েক জায়গা থেকে এক উত্তর পেয়ে ভাবছি কি করবো ! তখনই আমায়রা হোমস্টে-র ওনার রাজ কিশোর গুপ্তা রিং ব্যাক করে 'ম্যাক গার্ডেন-র' হোমস্টে-র কেয়ার টেকার মনজয় দার ফোন নম্বর দিলেন। কল করে জানালাম, পরের দিন যাচ্ছি, একটা ঘরই আমার লাগবে। দু-তিন থাকবো বলাতে বললো, দুদিনই হবে তিন নম্বর দিন অলরেডি বুকড। সাত একর জমির এক কোণে এক কোলোনিয়াল বিল্ডিং, মানে টালির ছাদের কুঁড়েঘর। আম বাগানে ঘেরা, বিরাট এক লন সামনে। গেটের ডানদিকে আলু, সর্ষের খেত। টিয়া, ধূসর রঙের ধনেশ চোখের সামনে নেচে বেড়াচ্ছে। বাড়ির ভেতরে তিনটে পার্টিশন, প্রথম দরজা দিয়ে ঢুকেই বসার জায়গা আর দুই প্রান্তে দুটো ঘর। ওই জায়গা পেরিয়ে পেড়িয়ে আবার আর একটা দরজা ও দুই প্রান্তে ডান দিকে-বাঁদিকে দুটো ঘর। মাঝের বসার জায়গায় একটা ফায়ারপ্লেস। শীতকালে গেলে দিব্বি জ্বালিয়ে রাত কাটানো য