Skip to main content

কুইন্স ম্যানশন, যার আসল নাম গ্যালস্টাউন ম্যানশন।

বিল্ডিংটা চেনা চেনা লাগছে! কোথায় বলুন তো ? ফ্লুরিজ, পিটার ক্যাট যে বিল্ডিং-র নিচের তলায়, ত্রিঙ্কাসের উল্টো দিকে রাসেল স্ট্রিট আর পার্ক স্ট্রিটের ক্রসিংয়ের কোণার প্লটে যে বড়ো বাড়িটা যার বর্তমান কুইন্স ম্যানশন । বাড়িটার আসল নাম গ্যালস্টাউন ম্যানশন।



১৯২০ সালে সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা ব্যায় করে এই বিশাল ইমারতটি তৈরি করা হয়েছিল, যা সেই সময়ে শুধুমাত্র একটা বাড়ির জন্য অত্যন্ত বিলাসবহুল ! ছয় তলার এই বাড়ি গঠন অনুযায়ী এখন যেমন আছে একশো বছর আগেও তাই ছিল, উপরের তলায় অ্যাপার্টমেন্ট আর গ্রাউন্ড ফ্লোরে দোকানপাট (বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান) । তখন এই বাড়ির ছাদ থেকে গঙ্গা সহ পুরো কলকাতা শহরের এক চমৎকার দৃশ্য দেখা যেত ।

আর্মেনীয়রা যখন কলকাতায় রমরমিয়ে ট্রেডিং কোম্পানি, পাবলিশিং হাউস, শিপিং লাইনের সাথে যুক্ত হয়ে নীল, লাক্ষা(গালা ) এবং জুয়েলারির ব্যবসা শুরু করেছিল তখন এক আর্মেনী এই ম্যানশনটি বানিয়েছিলো, শহরের প্রাণকেন্দ্রে । তারা শহরের প্রাইম রিয়েল এস্টেটেরও মালিক ছিল আর তাই হয়তো আর্মেনীয়রা কলকাতায় অনেক বড়ো এবং ইউরোপীয় ধাঁচে, কারুকার্যময়  সুন্দর প্রাসাদ ও অট্টালিকা তৈরি করেছিল।

এই প্রাসাদটি (বাড়িটি ) তৈরি করেছিলেন জোহানেস ক্যারাপিয়েট গ্যালস্টাউনের, ১৮৫৯ সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য অল্প বয়সে কলকাতায় আসেন। জাস্ট ভাবুন পড়াশোনার জন্য কলকাতায় এসেছিলো ! এসে তিনি এখানকার আর্মেনিয়ান ফিলানথ্রপিক একাডেমিতে ভর্তি হন, যা বর্তমানে আর্মেনিয়ান কলেজ নামে পরিচিত আর পরে জন্য সেন্ট জেভিয়ার্সে যান। ধীরে ধীরে, তিনি তার চেষ্টা, অধ্যবসায় এবং বুদ্ধি দিয়ে একটি টাকশাল তৈরি করেছিলেন। পরে তিনি একজন রিয়েল এস্টেট টাইকুন আর ঘোড় দৌড়ে এতটাই  উৎসাহী ছিলেন যে একসময় জোহানেস গালস্টাউনের নাম উল্লেখ না করে ভারতে ঘোড়দৌড় হতো না । নিজে থেকে অর্থ, প্রতিপত্তি, নাম-যশ বানিয়েছিলেন  বলে হয়তো অপরমহল ব্রিটিশদের সাথে ওঠাবসা ছিল । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ লক্ষী বেশিদিন তার সাথে থাকে নি, কোনো ভাবে ( কারোর কথায় ছলে-বলে ) তিনি রিয়েল এস্টেট এবং হর্স রেসিং দুটো থেকেই সর্বস্ব হারিয়েছিলেন।

তার তৈরি করা আর একটা প্রাসাদ রয়েছে যা তিনি তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে তৈরি করেছিলেন, তখন নাম ছিল গালস্টাউন পার্ক । এখন আমরা যে বাড়িটি নিজাম প্যালেস নামে চিনি । ক্যামাক স্ট্রিটের ক্রসিংয়ের কাছে, এজিসি বোস রোডে তার পাঁচটি মুকুটের মতো গম্বুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । এটা তার স্ত্রীর জন্য বানিয়েছিলেন বলে তৎকালীন রানীদের প্রাসাদের মতো করে বানানো । আমোদ-প্রমোদ আর বিলাসিতার সব সুবিধে আছে, আর মাথাঘুরে যাবার মতো সূক্ষ্য ডিজাইন করা পুরো বাড়িটায় ।


এই দুটো বিল্ডিং-এর আকার, আকৃতি, অলঙ্করণ, অউটলুক, ইঞ্জিনিয়ারিং, কার্যকারিতা, প্রয়োজনীয়তার এবং ব্যবহার সেই সময়ে যথেষ্ট প্রসংশা কুড়িয়েছিল। যা একটা বিষয় তো নিশ্চিত করে যে, সেই সময়ের তৈরি এই বিশাল গালস্টাউন ম্যানশন, গালস্টাউন পার্ক এবং এরকম আরও অনেক বড় বড় প্যালেস, ব্রিটিশ শাসনাকালে কলকাতায় আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের আধিপত্যের প্রমান দেয় ।



১৯২৪ সালে, বেঙ্গল ক্লাব তাদের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য গ্যালস্টাউন ম্যানশনে বেশ কয়েকটি চেম্বার কিনেছিল। কিন্তু, যেহেতু বেশিরভাগ সময় কক্ষগুলি খালি থাকে, ক্লাবটি সেগুলি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই ক্লাব এখানে এক অল্প সময়ের জন্য একটি ক্যাটারার খুলেছিলো যার নাম হেইঞ্চেস কিচেন। এই প্যালেসে এক সময় অনেক বিখ্যাত অফিস ছিল : যেমন ওরিয়েন্টাল গ্যাস কোম্পানি, যারা কলকাতার রাস্তায় প্রথম আলো জ্বালিয়েছিল, মীরতা লিনা : ফ্যাশান ডিসাইনার (মেয়েদের পোশাকের), মাস্টার টেইলার্স বরকত আলী অ্যান্ড ব্রাদার্স, সাহনী অ্যান্ড সন্স, স্বনামধন্য জুয়েলার্স স্যাট্রামদাস ধলমাল, ম্যাগনোলিয়া রেস্তোরাঁ, কেমল্ড আর্ট গ্যালারি, ক্যাসলউডস, যেখানে আইএফএ শিল্ড বার্ষিক পালিশ, হারমনি হাউস, হেয়ারড্রেসার এএন জন । ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ারও একটি অফিসও ছিল এই ভবনে।

উপরে নাম গুলোর কিছু এখনো গর্বের এই শহরে সাথে আছে বাকি গুলো কালের গর্ভে মিলিয়ে গেছে ।

১৯৫৩ সালে, রানী এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে গ্যালস্টাউন ম্যানসনটির নাম পাল্টে দিয়ে কুইনস ম্যানশন করা হয়, যেটা প্যালেসের গায়ে খোদাই করা আছে ।


Comments

Popular posts from this blog

হ্যালোউইন

প্রাচীন সেল্টিক উৎসব সো-ইন থেকে হ্যালোউইনের উৎপত্তি। হ্যালোউইন হল এক ছুটির দিন, যা প্রতি বছর ৩১শে অক্টোবর পালিত হয়। প্রায় 2,000 বছর আগে সেল্টস প্রজাতি বসবাস করত মূলতঃ বর্তমান আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর ফ্রান্স-এ আর তারা ভূত তাড়াতে নতুন পোশাক পরে কিম্ভুত সেজে আগুন জ্বালাতো। পয়লা নভেম্বর ছিল তাদের নতুন বছর উদযাপনের দিন। আসলে এই দিনটা গ্রীষ্মের শেষ, শীতের শুরু, ফসল কাটা কে চিহ্নিত করে। সেসময় বছরের এই সময়টায় প্রায়শই মানুষের মৃত্যু হতো, তাই সেল্টসরা বিশ্বাস করতেন যে নতুন বছরের আগের রাতে, জীবিত এবং মৃত মানুষের মধ্যে ব্যবধান দূর হয়ে যায় আর আজকের দিনটায় মৃতদের আত্মা পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই ছিল "সো-ইন" উৎসব। আসন্ন শীতের ঠান্ডা ও অন্ধকারকে আরামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল এই হ্যালোউইন। ওই দিনের সন্ধ্যায় ড্রুইডরা বিশাল বনফায়ার তৈরি করেছিল, যেখানে লোকেরা সেল্টিক দেবতাদের বলি হিসাবে ফসল এবং পশু পোড়ানোর জন্য জড়ো হয়েছিল। সময় উদযাপনের সময়, সেল্টরা পোষাক পরিধান করত, সাধারণত পশুর মাথা এবং চামড়া সমন্বিত, এবং একে অপরের ভাগ্য বলার চেষ্টা করত। খ্রিস্টাব্দ ৪৩ সনে রোমানরা বেশিরভাগ

রাগের ছবি

১ ) মেঘ মল্লার : মেঘ ( সংস্কৃত বুৎপত্তি ) মল্লার একটি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় মৌসুমী   রাগ।   কথায় বলে এই রাগ বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ করে যেখানে গাওয়া হয় সেখানে। ' মেঘ মল্লার ' রাগ মেঘের অনুরূপ যার মধ্যে মল্লারের আভা রয়েছে। মল্লার পরিবারের অন্যান্ন রাগগুলি হলো : মেঘ , মিয়াঁ কি মল্লার , গৌড় মল্লার , রামদাসী মল্লার , ধুলিয়া মল্লার ইত্যাদি। ঠাট : কাফি। আমাজন প্রাইমের ' বন্দিশ ব্যান্ডিট ' ওয়েব সিরিজের লাস্ট এপিসোডে ফরিদ হাসান আর মোহাম্মদ আমান মেঘ মল্লার গেয়েছে এবং তাতে বৃষ্টি এসেছে। শঙ্কর - এহসান - লয় এই   গানের দ্বায়ীত্বে ছিলেন। একটা আর্টিকলে তাদের কথা পড়লাম যে , যোধপুরে ২০২০ - র এপ্রিল মাসে এই গানটা যেদিন পুরো গাওয়া হয়েছিল সত্যি বৃষ্টি পড়েছিল , যা কোনোদিনও হয় নি নাকি। ২ ) গৌড় মল্লার :   হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি রাগ যা মল্লারের বৈশিষ্ট্য বহন করে আর এই   ' গৌড় ' নামের রাগটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে , মানে সে রকম করে কেউ গায় না । মল্লার পরিবারের

কদম ফুল - Kadam phool- common burflower

বর্ষাকালের সিগনেচার বলা হয় কদম ফুলকে , আরেক নাম নীপ , " এসো নীপ বনে ... " কবিতা তো জানাই আছে যাতে বর্ষা মানেই নীপ ( কদম্ব ও বলে অনেক রাজ্যে ) ।   খুব পরিচিত এই ফুল , নিটোল গোলাকার , প্রথমে সবুজ , পরে লাল থেকে টকটকে কমলা রঙের সাথে অসংখ্য লম্বা সাদা ফ্রিলস পুরো ফুল জুড়ে ।   হাতে নিলে বোঝা যায় বেশ একটু ভারী , মানে কাউকে ঢিল ছুড়ে মারার মতো আর ওই সাদা ফ্রিলস গুলো এমনিতে নরম কিন্তু ছুড়লে হুঁহুঁ , লাগবে বেশ। খুব মিষ্টি একটা গন্ধ আছে , গাছের পাস দিয়ে গেলেই টের পাওয়া যায় ফুল ফুটেছে   ( কদম তলায় কে ?) । প্রচুর ফ্র্যাংগনান্স বা আতর তৈরি হয় এই গন্ধের। আমাদের দেশের লিপিগুলোতে কদম ফুলের ও গাছের নাম আছে আর আমাদের পৌরাণিক কথকথায় কদম ফুলের বড়ো মুখ্য একটা জায়গা আছে।   ভারতের উত্তর দিকে , ভগবৎ পুরান থেকে শুরু রাধা ও কৃষ্ণের দুজনের জীবনেই   কদম ফুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।   বৃন্দাবন - মথুরায় , গোবর্দ্ধন পাহাড়ের দিকে   প্রচুর কদম গাছ , এই সময় মানে বর্ষাকালে একবার রাধে - রাধে